কক্সবাজার, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

নির্জন সৈকতে স্বরূপে ফিরছে প্রকৃতি

সুজাউদ্দিন রুবেল::

সৈকতে আছড়ে পড়ছে ঢেউ। দূর থেকেই শোনা যাচ্ছে গর্জন। কোলাহল নেই, চারদিকে সুনশান নীরবতা। কয়েকটি কুকুরকে দেখা গেলো সেই ঢেউয়ে গা ভাসাতে। মানুষের অনুপস্থিতিতে তারা খেলায় মেতেছে। কিন্তু সৈকতের নির্জনতা অটুট রাখতে তারাও যেনো অঙ্গীকারাবদ্ধ। তাদের মধ্যেও ছিল না কোনো হৈ-হল্লা।

করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ১৪ দিনের নিষেধাজ্ঞায় এই ছিল সৈকতের শুক্রবারের (২ এপ্রিল) চিত্র।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সমুদ্র সৈকতের লাবণী থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত যেখানে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটে, সেখানে শুক্রবার পুরো সৈকত ছিল ফাঁকা। ছিল না ফটোগ্রাফার, বিচ বাইক চালক, জেড স্কী চালক, কিটকট ব্যবসায়ী বা হকারদের দৌরাত্ম। পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টের সহস্রাধিক দোকানপাট।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সাগরের স্বচ্ছ পানির টানে অনেক পর্যটক ছুটে আসেন এই সৈকতে। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বাড়ায় প্রতিটি প্রবেশদ্বারে ট্যুরিস্ট পুলিশের কড়া পাহারা। সৈকতে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না কাউকে। ট্যুরিস্ট পুলিশের বাধার মুখে হতাশা নিয়েই অনেক পর্যটককে ফিরতে হচ্ছে প্রবেশদ্বার থেকে। তাদের মতে, সৈকত বন্ধের ঘোষণা আগে দিলে এই সমস্যায় পড়তে হতো না।

পর্যটক আলী এসেছিলেন তার ১০ বছরের ছেলেকে নিয়ে। সৈকতের বীচ মার্কেট দিয়ে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন। ট্যুরিস্ট পুলিশের বাঁধার মুখে প্রবেশ করতে পারলেন না সৈকতে। আলী বলেন, ‘কাজের সূত্রে পরিবার নিয়ে কক্সবাজার এসেছিলাম। সকালে ছেলেকে নিয়ে সৈকত দেখতে এসে বিপাকে পড়লাম। দূর থেকে সৈকত দেখেই চলে যেতে হচ্ছে।’ঢাকার মোহাম্মদপুর শেখেরটেক থেকে কক্সবাজার ভ্রমণে আসা খুকি বলেন, ‘আগে থেকে কক্সবাজার সৈকত বন্ধ ঘোষণা দিলে এই বিপদে পড়তে হত না। এত কষ্ট করে প্রস্তুতি নিয়ে কক্সবাজার ভ্রমণে এসেছি, আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষেরতো বার বার কক্সবাজার আসা সম্ভব না। এত অনুরোধ করার পরও সমুদ্রে পা ভেজানোর জন্য নামতে দিল না পুলিশ।’

রিদুয়ান নামে আরেক পর্যটক বলেন, ‘যদি কক্সবাজারগামী বাসগুলো বন্ধ থাকতো তাহলে কোনো সমস্যা হত না। এখন গাড়ি চলাচল করছে; আর কক্সবাজার এসে সৈকতে প্রবেশ করতে পারছি না। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে?’

এদিকে কক্সবাজারে রয়েছে সাড়ে ৪ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ। এগুলো খোলা থাকলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৫০ শতাংশ রুম চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। তবে পর্যটন স্পট বন্ধের ঘোষণায় পর্যটকরা কক্সবাজার ছাড়ছেন।

হোটেল প্রসাদ-প্যারাডাইসের ম্যানেজার আরিফ বলেন, ‘করোনার পরিস্থিতিতে প্রশাসন ৫০ শতাংশ রুম ভাড়া দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু এখন সৈকত যেহেতু বন্ধ; পর্যটকরা কক্সবাজার ছাড়ছে। ফলে হোটেলে ৫০ শতাংশ না পুরো হোটেলেই ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তারকামান হোটেলের এক ম্যানেজার বলেন, ‘করোনার কারণে সবকিছু মেনে নিতে হবে। বৃহস্পতিবার অর্ধ-শতাধিক পর্যটক হোটেল ছিল। কিন্তু সবাই শুক্রবার দুপুরে রুম ছেড়ে কক্সবাজার ত্যাগ করেছে। আর রমজানের আগ পর্যন্ত যে রুমগুলো বুকিং হয়েছিল তাও বাতিল করেছে পর্যটকরা।’

এদিকে শুক্রবার দুপুরে সৈকত, সৈকত এলাকার দোকানপাট ও হোটেল-মোটেল জোন পরিদর্শন করেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আল আমিন পারভেজ। এসময় তিনি বলেন, ‘যারা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখতে এসে প্রবেশ না করে চলে যেতে হচ্ছে; তাদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই বলার নেই। তারা বন্ধের ঘোষণাটি আগেই জানলে সত্যিই ভাল হতো। তবে যারা এসেছেন তাদের প্রতি অনুরোধ সৈকত এলাকা পরিহার করুন।’

তিনি আরও বলেন, ‘‘সরকারের যে নির্দেশনা ছিল করোনার উচ্চ ঝুঁকি এলাকাগুলোতে ভ্রমণ পরিহার করা ও সমাবেশ বন্ধ রাখা। দেখেন দুই সপ্তাহ আগেও কক্সবাজারে করোনার সংক্রমণ খুবই কম ছিল। মাত্র ২-৩ শতাংশ করোনার টেস্ট হতো। কিন্তু গত সপ্তাহ থেকে এটা ১০ শতাংশে উঠে গেছে।

‘ডাক্তাররা বলছেন- দেশের অন্যান্য স্থানে যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের অনেকেরই দেখা গেছে কক্সবাজারসহ অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে যাওয়ার। সংখ্যার দিক থেকে কক্সবাজার এখনো কম সংক্রমিত হলেও কিন্তু কক্সবাজার একটা বিশেষ বিবেচনায় উচ্চ ঝুঁকিযুক্ত এলাকা। সুতরাং করোনার সংক্রমণ রোধে সবার একটু কষ্ট হলেও বিধি-নিষেধগুলো মেনে নিতে হবে।”

হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির দেওয়া তথ্য মতে, কক্সবাজারে এখনও ৩০ হাজারের বেশি পর্যটক অবস্থান করছেন। তবে সমুদ্র সৈকতসহ পর্যটন স্পটগুলো আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারিভাবে বন্ধ ঘোষণার পর পর্যটকরা কক্সবাজার ছাড়ছেন।

পাঠকের মতামত: